সুনামগঞ্জ , বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ , ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হাসপাতাল চালুর দাবিতে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জন বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ হাওরে চড়ক উৎসবে মানুষের ঢল ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা, দ্রুত পাকা ধান কাটার আহ্বান বন্যার ঝুঁকিতে হাওরাঞ্চল তিন দপ্তরের ছুটি বাতিল গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত বেড়ে ৫১ হাজার, নিখোঁজ ১১০০০ ধর্মপাশায় দুই আসামি গ্রেফতার বিএনপি’র ঈদ পুনর্মিলনী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নববর্ষ উৎসব ডাকসু নির্বাচনের কমিশন গঠন মে মাসে এই সরকারকে ৫ বছর চাওয়ার কথা আমার নয়, জনগণের : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাগর-রুনি হত্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পেছালো ১১৮ বার সুনামগঞ্জ শহরের শৃঙ্খলার জন্য অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা নববর্ষের প্রত্যাশা, বিজন সেন রায় বোরো ধান কাটার ধুম, হাওরে বৈশাখী হাসি আমাদের পহেলা বৈশাখ ছাতকসহ দেশের ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিকল্পনা বাতিল ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টির বিক্ষোভ

সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে জনবল সংকটে সেবা ব্যাহত

  • আপলোড সময় : ১৩-০৪-২০২৫ ০১:০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৩-০৪-২০২৫ ০১:১৭:২৩ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে জনবল সংকটে সেবা ব্যাহত
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক সংকট বিরাজ করছে। হাসপাতালে অনুমোদিত চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদের বিপরীতে অর্ধেকেরও বেশি পদ শূন্য থাকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে চিকিৎসক ও অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ) না থাকায় জেলা সদর হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) কক্ষ ও শয্যা প্রস্তুত থাকার পরও তা চালু করা যাচ্ছে না।
আইসিইউ চালু না হওয়ায় এ জেলার বাসিন্দাদের আইসিইউ সেবা নিতে ছুটতে হচ্ছে সিলেট বিভাগীয় শহরে। একদিকে জনবল সংকট, অন্যদিকে শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, বিভিন্ন পর্যায়ে ৬৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৩১ জন।
শূন্য রয়েছে ৩৫ জন চিকিৎসকের পদ। ২৬১ জন নার্সের বিপরীতে আছেন ১৪১ জন। শূন্য রয়েছে ১২০টি নার্সের পদ। আইসিইউ বিভাগ চালু করতে হলে তিনজন চিকিৎসক এবং তিনজন অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ) লাগবে। এছাড়া আরও কয়েকজন সহযোগী কর্মীরও প্রয়োজন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় চালু করা যাচ্ছে না। চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদগুলো হচ্ছে- সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ডেন্টাল), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি)। স্থানীয় সচেতনমহল মনে করেন, হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার প্রধান ভরসা এই সদর হাসপাতাল। চিকিৎসকসহ নানা সংকটের মধ্যেই এখানে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে এই সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। ফলে দুর্ঘটনাসহ গুরুতর অবস্থার রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিলেটে। এখানকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায়, জেলার অসহায় ও দরিদ্র মানুষজন দিনদিন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই বিষয়ে নজর দেবেন এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন - এটাই এখন জেলার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। হাসপাতালের বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকায় কর্মরত চিকিৎসকদের ওপর চরম চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলেন কর্মরত ডাক্তারগণ। তাঁরা জানান, সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক থাকায় অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে তাদের, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর ফলে রোগীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানেও বিলম্ব ঘটছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব প্রকট। সাধারণ রোগের কিছুটা চিকিৎসা পেলেও জটিল যেকোনো রোগের জন্য তাদের সিলেট কিংবা ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে, যা একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি সময় সাপেক্ষ। সদর উপজেলার মল্লিকপুরের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল চালুর পর থেকেই শুনে আসছি চিকিৎসক সংকট, নার্স সংকট ইত্যাদি। এই সংকট শুনতে শুনতেই আমরা হতাশ। এই সংকট আর কাটে না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে যদি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়, তাহলে হাসপাতালের দরকার কিতা? একমাত্র ইমার্জেন্সিতে কিছুটা সেবা পাওয়া যায়, তাও সেখানে বহিরাগতদের আনাগোনা প্রচুর। কর্তৃপক্ষকে প্রথমে ইমার্জেন্সিকে দালাল ও বহিরাগত মুক্ত করতে হবে। আর হাসপাতালে কোনো রোগী নিয়ে আসলেই ডাক্তাররা কয় (বলে) সিলেট লইয়া যাওগি। আমরা চাই দ্রুত এই চিকিৎসক সংকট নিরসনের উদ্যোগ করা হউক।
ষোলঘরের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক না থাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি। যাতে করে মানুষ হাসপাতালে এসে তার কাঙ্খিত সেবা পায়। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসতেছি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক এর জন্য আবেদন করে আসছেন, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কেন পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক নিয়োগ দিচ্ছেন না। একটি জেলা সদর হাসপাতালের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে চিন্তা করেন উপজেলার হাসপাতালের কি অবস্থা হবে?

তাহিরপুর উপজেলার মো. মহিবুর রহমান বলেন, বেশকিছুদিন আগে আমার ছোট্ট ছেলেকে (১০ মাস বয়স) নিয়ে হাসপাতালে আসছিলাম। তার হাতের ২টা আঙুল দরজায় চাপা পড়ে কেটে যায়, পরে উপজেলা সদর হাসপাতালে না নিয়ে ভাবলাম সরাসরি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখানে হয়তো ভালো চিকিৎসা সেবা পাবো। কিন্তু সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পর হতাশ হলাম, তাঁরা বলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট নিয়ে যান, এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করা গেলেও আঙুলগুলো টিকবে কিনা তা অনিশ্চিত, বলা যায় এক রকম ভয় দেখানো হয়ে ইমার্জেন্সি বিভাগে। পরে বাধ্য হয়ে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা করাইছি।

জামালগঞ্জ উপজেলার নোয়াহালট গ্রামের বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, একটু উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না গিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে আসেন, কিন্তু এখানে আসার পর চিকিৎসক সংকট থাকার কারণে সিলেট যেতে হয়। বিশেষ করে চোখের কোনো সমস্যা দেখা দিলে হাসপাতালে আর সেবা মিলে না, তখন বাধ্য হয়ে প্রাইভেট চক্ষু হাসপাতালে যেতে হয়। এই সুযোগে প্রাইভেট চক্ষু হাসপাতালগুলো লাভবান হচ্ছেন। আমি মনে করি কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনা করা দরকার।
সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার পরও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স